প্রচ্ছদ, বিজ্ঞাপন এসব বাদ দিলে মেরেকেটে পাতা পঞ্চাশও হবে না,- এরকমই স্লিম্ছাম্ ছ’টি খন্ড, মানে ম্যাক্সিমাম শ’তিনেক পাতার ধাক্কা। হুম্… ভেবেচিন্তেই ‘ধাক্কা’ শব্দটি প্রয়োগ করলাম। কারণ একবার এ বস্তু হাতে এলে হাল্কা চালে কয়েক পাতা উল্টোবার পরই পাঠক যাকে বলে এক রামধাক্কায় বইটির মধ্যে ঘাড়মুখ গুঁজে নেশাগ্রস্তের মতো একটানা পড়ে যেতে বাধ্য হবে। না, একথা মানছি, আজকের ভাগদৌড়ের জীবনযাপনে কোনো একটা বিশেষ বই চুম্বকের মত চোখ আর মন দুটোকেই টেনে রাখবে এটা বস্ বিশ্বাস করতে অল্প চাপ হয়ে যায়। কিন্তু ঐ যে বলে “… তর্কে বহুদূর”। তাই ভণিতার ভাণ্ডার আর বেশি না বাড়িয়ে এবার বইটা সম্পর্কে একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
MARYSE DUBUC একজন ক্যানাডিয়ান লেখিকা। কুইবেকের এক ছোটোখাটো জনপদ কম্পটন- এ তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ফরাসী সাহিত্য ও কম্যুনিকেশন নিয়ে পড়াশুনোর পালা চুকিয়ে তিনি জীবনসঙ্গী করেন অ্যানিমেশন ও কমিক্সের জগতের মানুষ MARC DELAFONTAINE ওরফে ‘DELAF’ -কে। এরপর ২০০৪ সালে স্ত্রী ও স্বামীর যৌথ প্রচেষ্টায় ‘SAFARIR’ নামক কুইবেকের এক রঙ্গব্যাঙ্গমূলক পত্রিকায় আত্মপ্রকাশ করে ‘LES NOMBRILS’ (গল্প – DUBUC / ছবি – DELAF)।
‘LES NOMBRILS’ –এই ফরাসী শব্দবন্ধের মানে ‘BODY PIERCING JEWELLERY’, অর্থাৎ কানের দুল, নাকের নোলক বা শরীরের কোনো একটা জায়গা ফুঁড়ে যে গয়না পরার স্টাইল ‘সোওওও হ্যাপেনিং’ বলে মানবসমাজে স্বীকৃত হয়ে আসছে আর কি। ‘LES NOMBRILS’ –এই কমিক্স সিরিজ ২০০৫ থেকে প্রকাশিত হয়েছিল ফ্রান্সের বিখ্যাত ‘SPIROU’ পত্রিকায়। আর ২০০৯ সাল থেকে ব্রিটিশ পাবলিশার ‘CINEBOOK’ পরপর খণ্ডগুলি ইংরাজীতে অনুবাদ করতে থাকে এবং সেই ইংরাজী অনুবাদে ‘LES NOMBRILS’ – হয়ে দাঁড়ায় ‘THE BELLYBUTTONS’।
ভিকি, জেনি ও কারিন এই তিনমূর্তিকে ঘিরে বেলিবাটন্সের গপ্প শুরু। এক ঝলকে মনে হবে তিন অভিন্ন আত্মা সখী যাদের একে অপরের অদর্শনে পেটের ভাত হজম হয় না। গল্প যত এগোয় তত বোঝা যায় এরা আসলে FRENEMIES (FRIEND + ENEMIES)। তিনজনের মধ্যে জেনি মারকাটারি টাইপের সুন্দরী ও চরম গবেট। ভিকি একজন ‘BLACK DIVA’ যার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য এই ভুবনের সমস্ত সার্চলাইট নিজের ওপরে টেনে আনা। আর কারিন, ডিগ্ডিগে রোগা, ‘নুডল্স’ শিরোপায় ভূষিতা, ভীষণ ভালোমানুষ টাইপ, বন্ধুনিবেদিতাপ্রাণা বেচারা কারিন, ভিকি আর জেনির কাছে যার উপযোগিতা টয়লেট পেপারের চেয়ে বেশি কিছু নয়। এরপর ধীরেসুস্থে ড্যান, জন জন, মারফি, মেলানি, অ্যালবিন –এই সব চরিত্রেরা একে একে ভীড় জমায়। পাল্টে যেতে থাকে সম্পর্কের সমীকরণ। নেহাৎই ‘আর্চি’ কমিক্সের ঘরানায়, টীনএজারদের দৈনন্দিন জীবনের মজারু গল্প দিয়ে যার শুরু, খন্ডে খন্ডে এবারে সেই ছবিতে গল্পে, ‘FUN FACTOR’ -কে আপাদমস্তক অটুট রেখেই চলে আসে সামাজিক বৈষম্য, জটিল প্রেমের কুটিল সম্পর্ক, অ্যাডোলসেন্স মনঃসমীক্ষণ, আত্মসর্বস্বতার চূড়ান্ত, সাইকো প্রব্লেম, সমকামের চোরাটান এবং কাহিনীর শেষভাগে গোটা গল্পের বাতাবরণ দখল করে নেয় রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারের দীর্ঘায়িত ছায়া। এভাবেই গড়পড়তা ‘CHIK LIT’ –এর সীমানা ছাড়িয়ে তৈরি হয় বেলিবাটন্সের ট্যাগলাইন, – “LIFE IS CRUEL. DEAL WITH IT.”
বেলিবাটন্সের গল্প বলার আনোখা স্টাইল এই কমিক্সের এক অন্যতম ইউএসপি। প্রতিটি খণ্ডে যত ঘটনা ঘটছে সেগুলিকে বলার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে জাস্ট দুটো পাতা। দুটি পাতায় এক একটা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে (অল্প দু’একটা ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়) আর তারপর দুটো পাতা, তারও পর দুটো… এইভাবে লেখিকা বুনে চলেছেন বিনিসুতোর কাহিনীমালা। তিনশো পাতা ধরে এইভাবে গল্পের ঘটনাক্রমবিন্যাস বজায় রেখে একই সঙ্গে পাঠকের আকর্ষণবিন্দুকে ঠায় একজায়গায় স্থির করে রাখার চমকপ্রদ ক্ষমতার অধিকারী DUBUC ও DELAF –এর জুটির উদ্দেশ্যে শুধু একটা শব্দই উচ্চারিত হতে পারে, – KUDOS।
সব পাখি, সব নদী ঘরে ফিরে আসার পরেও যেমন ‘মুখোমুখি বসিবার’ জন্য কেউ অপেক্ষা করে থাকে তেমনি একটানে ‘THE BELLYBUTTONS’ শেষ করার পরে মাথার চারপাশে কিছু প্রশ্ন ভীড় করে। কমিক্স কি শুধুই শিশুপাঠ্য? কমিক্সের কোন পরিচয়ে আমরা বাঙালীরা পরিচিত হয়েছি? ওরা…… আমরা?…। না, কোনো বিভাজনের কথা নয় বরং খুঁজে চলেছি মরীচিকাময় সাম্যবিন্দু। দেখা যাক্… লেখা ও দেখার এই তো সবে শুরু।
THE BELLYBUTTONS Comic Book Review By Dr.Indranil Kanjilal:
Professionally a high school teacher, Dr.Indranil Kanjilal has a passion for comics. Not only reading, he loves to explore this medium of visual storytelling by going through the history of comics’ universe. He also has a knack for writing short features. Being a post graduate student of Bengali literature he has completed his Ph.D. on eminent Bengali author Shirshendu Mukhopadhay.